বিশ্বায়নের যুগে একটি দেশের সার্বিক উন্নতির মাপকাঠিতে অনেক বিষয়ই মূল্যায়ন করা হয়। তার মধ্যে অন্যতম বা উল্লেখযোগ্য হলো নারী উন্নয়ন বা ক্ষমতায়ন।
দেশের বহুজাতিক নিয়ন্ত্রক কোম্পানির মধ্যে শীর্ষে অবস্থান করছে ‘বাংলাদেশ এক্সপোর্ট ইমপোর্ট কোম্পানি লিমিটেড’ বা ‘বেক্সিমকো’। এটি প্রতিষ্ঠিত হয় ৭০ এর দশকে। দেশের পুঁজিবাজার মূলধনের বৃহৎ অংশ রয়েছে বেক্সিমকোর। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটির পণ্য ৫৫টি দেশে রফতানি করা হয়।
ফার্মাসিউটিক্যালস, সিরামিকস, নবায়নযোগ্য শক্তি, টেক্সটাইল, এলপিজি, খাদ্য ও পানীয়, স্যাটেলাইট থেকে হোম টেলিভিশন, পিপিই, মিডিয়া, আইসিটি, রিয়েল এস্টেট, আর্থিক পরিষেবা এবং ভ্রমণ ও পর্যটনসহ বিস্তৃত শিল্পে বিনিয়োগ রয়েছে বেক্সিমকোর। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ও সম্ভাবনাময় খাত বেক্সিমকো এলপিজি। প্রতিষ্ঠানটির এই অংশে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ ও বড় পদে রয়েছেন তিনজন নারী। সাহস ও নিষ্ঠার সঙ্গে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে তারা পুরুষ সহকর্মীদের সঙ্গে তাল মিলিয়ে সব পরিস্থিতিতেই দক্ষতার পরিচয় দিয়ে যাচ্ছেন।
বেক্সিমকো এলপিজি এর মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনার প্রধান রুবিনা খান বলেন, অন্য যেকোনো প্রতিষ্ঠানের মতোই বেক্সিমকো এলপিজিতে কাজের ক্ষেত্রে ছেলে-মেয়েদের মধ্যে কোনো ভেদাভেদ নেই। দেশের যেসব মেয়েরা ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পড়াশোনা করছে, তাদের জন্য যথেষ্ট উপযুক্ত কাজের পরিবেশ রয়েছে এখানে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, প্রতিটি ক্ষেত্রেই ছোট ছোট কিছু চ্যালেঞ্জ থাকে। যেহেতু এলপিজি কোম্পানিগুলো সাধারণত প্ল্যান্ট বেইজ সংস্থা এবং দেশের প্লান্টগুলো বেশিরভাগই ঢাকার বাইরে অবস্থিত, তাই বিভিন্ন কারণ যেমন সামাজিক, পারিবারিক বা নিরাপত্তাজনিত ভীতিতে মেয়েদের ঢাকার বাইরে গিয়ে কাজ করা সম্ভব হয় না। কিংবা তারা আগ্রহী হতে চায় না। কিন্তু আমি বলব- এসব চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও মেয়েদের জন্য যথেষ্ট কাজের পরিবেশ রয়েছে বেক্সিমকো এলপিজিতে। আমাদের সঙ্গে এখন অনেক ইঞ্জিনিয়ার মেয়েরা কাজ করছে। তারা বেশ ভালোও করছে। তবে তারা যদি প্ল্যান্টে কাজ করতো তাহলে আরো সিনিয়র এবং ভালো জায়গায় পৌঁছানোর সুযোগ পেত।
রুবিনা খান আরো জানান, বেক্সিমকো এলপিজিতে বেশ ভালো সংখ্যক মেয়েরা এরই মধ্যে দক্ষতার পরিচয় দিয়ে প্রতিটা বিভাগেই সিনিয়রিটি অর্জন করছেন। তাই বেক্সিমকো এলপিজি হলো এমন একটি কাজের জায়গা, যেখানে নারী-পুরুষের কোনো ধরনের বৈষম্য নেই। সবার ক্ষেত্রেই এখানে কাজের সমান সুযোগ-সুবিধা রয়েছে। আমাদের সিনিয়ররা সর্বদাই সামনে থেকে গাইড দেন, আমরা যাতে আরো ভালো জায়গায় যেতে পারি। আবার অনেক ক্ষেত্রে ভুল করলে সিনিয়ররা সেই ভুলটা ধরিয়ে দেন যেন আমরা পিছিয়ে না পড়ি। এতে নারীদের সামনে এগিয়ে যাওয়ার পথ আরো সহজ হয়।
বেক্সিমকো এলপিজি এর ডেপুটি ম্যানেজার (ফাইন্যান্স ও একাউন্টস) ইসরাত জাহান বলেন, বেক্সিমকো এলপিজিতে মেয়েদের কর্মক্ষেত্রে কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে। যেমন এখানে দিন-রাতের একটা বিষয় রয়েছে। আমি হিসাব বিভাগ দেখাশোনা করি। অনেক সময় ভোর রাতে উঠেও আমাকে কাজ করতে হয়। আবার ফোন এসেছে অফিস থেকে, এলপিজির ট্রাক দাঁড়িয়ে আছে; হিসাবের গোলমাল ঠিক করে ট্রাকটা না সরালে রাস্তায় যানজটের সৃষ্টি হবে, এমন পরিস্থিতিতে দিন ও রাতেও কাজ করতে হয়। তাই কাজের নির্দিষ্ট কোনো সময় নেই। এটাও একটা চ্যালেঞ্জ। কিন্তু আমি যদি এটাকে না নিতে পারি, আত্তীকরণ করতে না পারি তাহলে বিষয়টি কঠিন হয়ে দাঁড়ায়।
তিনি বলেন, আমাদের এখানে সহকর্মীরা খুবই আন্তরিক। সবাই সহযোগিতা করার মানসিকতা নিয়েই কাজ করে। কাজের পরিবেশও আমাদের মেয়েদের জন্য অনেক উপযোগী। এই জিনিসগুলো বেক্সিমকোর বাইরে অন্য কোথাও হয় কি না জানা নেই।
বেক্সিমকো এলপিজি এর উপ-মহাব্যবস্থাপক (ব্যবসা উন্নয়ন) তাসনুভা চৌধুরী বলেন, বেক্সিমকো এলপিজি হলো ব্র্যান্ড, একটি স্টাইল, একটি কোয়ালিটি। এর একটা নিজস্ব সত্ত্বা রয়েছে যেমন মার্কেটে গেলেই অনেকে বলেন- ‘ও, আচ্ছা বেক্সিমকো এলপিজি?’
তিনি বলেন, আমাদের বেক্সিমকো এলপিজির কাজের পরিবেশটা অনেক চমৎকার। এখানে অনেক ধরনের কাজ করতে হয়। কয়েকটা ডিপার্টমেন্টের প্রধান হচ্ছেন নারী। তারা বেশ দারুণভাবেই কাজ করছে। বেক্সিমকো এলপিজির ব্যবস্থাপনা নিয়ে আমরা খুশি। কোনো সমস্যা হলে আমি নিজেই তার দ্রুত সমাধান করার চেষ্ট করি। আর মার্কেটে বেক্সিমকোর এলপিজির অবস্থান তো খুবই ভালো।
তাসনুভা আরো বলেন, দেশের পিছিয়ে পড়া নারীদের সাহসের অভাব। আর কিছু নয়। তারা নিজেরা সব সময় দ্বিধায় থাকেন।
তাসনুভা বলেন, আপনারা (সাংবাদিকরা) যদি নারীদের শিক্ষা সমর্থন করেন তাহলে নারীদের উপযুক্ত জায়গাও সমর্থন করতে হবে। আমরা বেতন পাই কাজের দক্ষতার ওপর। প্রমোশন পাই আমাদের কাজের যোগ্যতা অনুযায়ী।
তিনি বলেন, ভবিষ্যতে এলপিজি খাতে আরো অনেক ধরনের পরিবর্তন আসবে। ২০১৩ সালে যেখানে ৮০ হাজার মেট্রিকটন ছিল এলপিজি এর চাহিদা, ২০২১ সালে সেটি প্রায় ১৪ লাখ মেট্রিকটন এসে দাঁড়িয়েছে। অর্থাৎ এলপিজি খাত খুব ভালোভাবেই এগিয়ে চলছে। ফলে বিদেশি বিনিয়োগ বাড়ছে। এরই মধ্যে বাইরের কিছু কোম্পানি এসে দেশি কোম্পানিগুলোকে একোয়ার করেছে। এসব বিনিয়োগ যে শুধু এলপিজি খাতকে সমৃদ্ধ করবে তা নয়; এর ফলে যেমন বাড়বে সেবার মান তেমনই প্রয়োজন বাড়বে আরো দক্ষ মানবসম্পদের।
এই সেক্টরে নারীদের চাকরি সম্পর্কে তাসনুভা বলেন, এলপিজি সেক্টরে ইঞ্জিনিয়ারদের চাহিদা অনেক বেশি। আমাদের দেশে যেসব মেয়েরা ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পড়েছেন, এখানে তাদের যথেষ্ট কাজের জায়গা রয়েছে। আমি মনে করি- এই সুযোগটা তাদের কাজে লাগানো উচিত।