Date: December 6, 2022
Source: Somoy News
গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে তিস্তা নদীর চরে দেশের বৃহত্তম সৌর বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। ইতোমধ্যে জাতীয় গ্রিডে ২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পৌঁছে দিতে ৩৫ কিলোমিটার সঞ্চালন লাইনও বসে গেছে। চলতি ডিসেম্বর মাসেই উৎপাদন ও সরবরাহ শুরুর আশা বেক্সিমকোর অঙ্গ প্রতিষ্ঠান তিস্তা সোলার লিমিটেডের।
২০১৭ সালে সুন্দরগঞ্জ উপজেলার প্রত্যন্ত তিস্তা চরের ৭০০ একর জমির ওপর দেশের সবচে বড় সৌর বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের কাজ শুরু করে বেক্সিমকোর অঙ্গ প্রতিষ্ঠান তিস্তা সোলার লিমিটেড।
কর্তৃপক্ষ বলছে, এখানে ৫ লাখ ২০ হাজার সোলার প্যানেল বসানো হয়েছে। ১৬টি কনভার্টার স্টেশনের মাধ্যমে জাতীয় গ্রিডে ২শ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পৌঁছে দিতে ৩৫ কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন বসানোর কাজও শেষ হয়েছে। চলতি ডিসেম্বর মাসেই উৎপাদন ও সরবরাহ শুরুর আশা করছে কর্তৃপক্ষ।
তিস্তা সোলার লিমিটেডের ডেপুটি ম্যানেজার নাহিদ হাসান বলেন, এরইমধ্যে ৯০শতাংশের বেশি কাজ শেষ হয়েছে। সবশেষ বড় কাজ ছিল প্লান্ট পরিচালনার জন্য ইলেক্ট্রিক্যাল কাজও শেষ হয়েছে। এখন শুধু উৎপাদন শুরুর অপেক্ষা। চলতি ডিসেম্বর মাসের সুবিধা মতো একটি দিন এর আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরুর অপেক্ষা করছেন বলে জানান তিনি।
সংশ্লিষ্টদের মতে, বৃহত্তর রংপুর-দিনাজপুর অঞ্চলে বিদ্যুৎ ঘাটতিতে আশার আলো দেখাচ্ছে তিস্তা চরের সৌর বিদ্যুৎ প্রকল্প। সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজনের রংপুরের সভাপতি খন্দকার ফকরুল আনাম বলেন, ২শ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ এই অঞ্চল থেকে যুক্ত হলে ঘাটতি পূরণ তো হবেই, তার চেয়েও বড় উপকার হবে, লো-ভোল্টেজের যন্ত্রণা থেকে মুক্তি মিলবে। এতো দিন স্থানীয় পর্যায়ে বিদ্যুতের উৎপাদনকেন্দ্র না থাকায় ন্যাশনাল গ্রিডের স্লোথ প্রবাহে পর্যাপ্ত তরঙ্গ ছিল না এই অঞ্চলে।
রংপুর মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি রেজাউল করীম মিলন বলেন, সবচে বড় যে বিষয়টি, তা হলো এই ২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ যদিও ন্যাশনাল গ্রিডে যুক্ত হবে, তারপরও এই অঞ্চলে বিদ্যুৎনির্ভর যে শিল্প ইউনিটগুলো রয়েছে, তাতে উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি পাবে। একটা গতি আসবে। বছরের পর বছর ধরে এই অঞ্চলের শিল্প লো-ভোল্টেজের কারণে দারুণভাবে ভুগছিল। মিলন বলেন, তিস্তা নদীকে ঘিরে আমাদের এই অঞ্চলে আরও অনেক সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদন হতে পারে। ১১৫ কিলোমিটার নদীর দুই ধারে এমন অসংখ্য চর আছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিশ্বব্যাপী জ্বালানি সংকটের প্রেক্ষাপটে সৌরবিদ্যুৎ হতে পারে ভরসা। জ্বালানী হিসেবে গ্যাস ও পরিশোধিত তেলের ওপর চাপ বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে বিশ্বব্যাপী যে সংকট শুরু হয়েছে, তা ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধির শঙ্কা থেকে উন্নত দেশগুলো এখন সৌরবিদ্যুতের কথা ভাবছে। কোন কোন দেশ আগে থেকেই এই পথে হাঁটছে। তিস্তা চরের এই সৌরবিদ্যুৎকেন্দ্র বিদ্যুৎখাতে আমাদের সক্ষমতা অর্জনের শুরু হিসেবেই পরিগণিত হবে বলে মন্তব্য রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইলেক্ট্রিক্যাল এন্ড ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রধান ড. ফেরদৌস রহমানের।
তিস্তা সোলার কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, বছরে ৩৫০ গিগাওয়াট আওয়ার বিদ্যুৎ উৎপাদন হবে এখানে। জ্বালানি ভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে এই পরিমাণ উৎপাদনে পুড়াতে হতো ১৩২ কোটি লিটার তেল। আগামী ২০ বছর এখান থেকে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডকে ১৫ সেন্ট রেটে বিদ্যুৎ দেবে তিস্তা সোলার লিমিটেড। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় হচ্ছে দেড় হাজার কোটি টাকা।