পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বিবিধ খাতের কোম্পানি বেক্সিমকো লিমিটেডের গ্রিন-সুকুক আল ইসতিসনার লেনদেন আগামীকাল শুরু হবে। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) ‘এন’ ক্যাটাগরিতে এটির লেনদেন হবে। বন্ডটির ট্রেডিং কোড ‘বেক্সজিসুকুক’। কোম্পানি কোড ‘২৬০০৪’। ডিএসই সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
বেক্সিমকো গ্রিন-সুকুক আল ইসতিসনা শরিয়াহভিত্তিক বন্ডটির মাধ্যমে সংগৃহীত অর্থ বেক্সিমকো লিমিটেডের সাবসিডিয়ারি তিস্তা সোলার লিমিটেড ও করতোয়া সোলার লিমিটেডের নির্মাণকাজে ব্যয় করা হবে। এছাড়া বেক্সিমকোর বস্ত্র খাতের ব্যবসা সম্প্রসারণে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি কেনা এবং পরিবেশ উন্নয়ন ও সংরক্ষণ নিশ্চিত করতে এ অর্থ ব্যবহার করা হবে। বেক্সিমকো গ্রিন-সুকুক ট্রাস্ট নামে স্পেশাল পারপাস ভেহিকলের মাধ্যমে এ সুকুক ইস্যু করা হয়।
এ সুকুকের মেয়াদ হবে পাঁচ বছর। ৯ শতাংশ ভিত্তিমূল্যের সঙ্গে মার্জিন যোগ করে ছয় মাস অন্তর বন্ডটিতে বিনিয়োগের বিপরীতে রিটার্ন দেয়া হবে। বেক্সিমকো লিমিটেডের আগের বছরের বার্ষিক সাধারণ সভায় (এজিএম) ঘোষিত লভ্যাংশ ও ভিত্তিমূল্যের ব্যবধানের ১০ শতাংশ মার্জিন হিসেবে নির্ধারণ করা হবে। যদি লভ্যাংশের হার ভিত্তিমূল্যের সমান বা কম হয় তাহলে সেক্ষেত্রে ভিত্তিমূল্যের হিসাবে রিটার্ন প্রদান করা হবে। আর লভ্যাংশ ৯ শতাংশের বেশি হলে তার ১০ শতাংশ সুকুকের মুনাফার সঙ্গে যুক্ত হবে।
এর আগে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) ৭৭৯তম কমিশন সভায় বেক্সিমকো লিমিটেডের সুকুকটি অনুমোদন করা হয়। গত বছরের এপ্রিলে বেক্সিমকো লিমিটেডের ৩ হাজার কোটি টাকার সুকুক ইস্যুর পরিকল্পনায় অনুমোদন দেন কোম্পানিটির শেয়ারহোল্ডাররা। বেক্সিমকোর সুকুক অনুমোদনের ক্ষেত্রে বেশকিছু শর্তারোপ করে বিএসইসি। মূলত শরিয়াহভিত্তিক এ গ্রিন বন্ডটির বিনিয়োগকারীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতেই এসব শর্তারোপ করা হয়। এর অন্যতম হচ্ছে কোনো কারণে বেক্সিমকো যদি সুকুকের বিনিয়োগকারীদের রিটার্ন দিতে না পারে তাহলে সেক্ষেত্রে এর ট্রাস্টি বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিবি) কাছে বিদ্যুৎ বিক্রি বাবদ প্রাপ্ত অর্থ সুকুকের অনুকূলে জমা দেয়ার জন্য বলতে পারবে। এক্ষেত্রে বিদ্যুৎ বিক্রির অর্থ থেকে সুকুকের বিনিয়োগকারীদের পাওনা পরিশোধ করার সুযোগ রয়েছে।
সুকুকে বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগের শতভাগ বেক্সিমকো লিমিটেডের শেয়ারে রূপান্তরের সুযোগ থাকছে। এক্ষেত্রে প্রতি বছর সর্বোচ্চ ২০ শতাংশ হারে সুকুক শেয়ারে রূপান্তর করা যাবে। গুণিতক হারে অর্থাৎ ৫, ১০, ১৫ ও ২০ শতাংশ রূপান্তরের সুযোগ থাকছে। কোনো বছর শেয়ারে রূপান্তরের সুযোগ গ্রহণ না করলে সেটি পরবর্তী বছরে করা যাবে। এ রূপান্তরের মূল্য নির্ধারিত হবে রেকর্ড তারিখের আগের ২০ কার্যদিবসে ডিএসইতে বেক্সিমকোর শেয়ারের ভারিত গড় মূল্যের ৭৫ শতাংশ। যদি কোনো বিনিয়োগকারী সুকুককে শেয়ারে রূপান্তর করতে না চান, তাহলে পাঁচ বছরে ওই সুকুকের অবসায়ন হবে।
সুকুকটির ট্রাস্টি হিসেবে কাজ করছে ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ লিমিটেড (আইসিবি)। ইস্যু ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে রয়েছে সিটি ব্যাংক ক্যাপিটাল রিসোর্সেস লিমিটেড ও অগ্রণী ইকুইটি অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড।
সর্বশেষ অনিরীক্ষত আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি ২০২১-২২ হিসাব বছরের প্রথম প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) ভালো ব্যবসা করেছে বেক্সিমকো লিমিটেড। প্রথম প্রান্তিকে কোম্পানিটির আয় হয়েছে ১ হাজার ৭৫৭ কোটি ৫৮ লাখ টাকা। যেখানে আগের বছরের একই সময়ে আয় ছিল ৬৫৩ কোটি ৪১ লাখ টাকা। এ সময়ে কোম্পানিটির আয় বেড়েছে প্রায় ১৬৯ শতাংশ।
প্রথম প্রান্তিকে বেক্সিমকো লিমিটেডের কর-পরবর্তী নিট মুনাফা হয়েছে ৩৬০ কোটি ৫৩ লাখ টাকা। যেখানে আগের বছরের একই সময়ে নিট মুনাফা ছিল ১২ কোটি টাকা। এক বছরের ব্যবধানে কোম্পানিটির নিট মুনাফা বেড়েছে প্রায় ৩০ গুণ। প্রথম প্রান্তিকে কোম্পানিটির ইপিএস হয়েছে ৪ টাকা ১১ পয়সা। এ বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর শেষে কোম্পানিটির এনএভিপিএস দাঁড়িয়েছে ৮৩ টাকা ৪২ পয়সায়।